গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না? জেনে নিন

আমরা যখন জানবো যে একজন গর্ভবতী মহিলার কি খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বা কি ধরনের সবজি, কিভাবে খাওয়ার মাধ্যমে তার গর্ভাবস্থায় সন্তান সুস্থ থাকবে।

গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না? জেনে নিন


তখন সেই খাবার গুলো সেই অনুযায়ী খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে এমন পুষ্টি উৎপন্ন হবে। তেমনি গর্ভে যে শিশুটি থাকবে সেই শিশুটির পুষ্টি সম্পূর্ণ হবে। এর জন্য আমাদের জানতে হবে

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় যখন একজন নারী ঠিকঠাক মতো খাওয়া-দাওয়া করে। তখন তার সন্তান হয় সুস্বাস্থ্যবান। কেননা গর্ভাবস্থায় একটি মা যখন খাওয়া-দাওয়া ভালো করবে তখন তার সন্তানও সেই পুষ্টিটি ঠিকমতো পাই। এর জন্য আমাদের জেনে নিতে হবে কি কি খাবার মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারবো আমরা গর্ভাবস্থাতেই। এর জন্য আজকে এটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়ার ফলে কি উপকার হয়।

গর্ভাবস্থায় কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন

গর্ভাবস্থায় একটি নারীর প্রচুর পরিমাণে শরীরে প্রোটিন প্রয়োজন। মূলত গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এর ফলে গর্ভধারিনী মা ও বাচ্চা অনেক পুষ্টি অর্জন ও সুস্বাস্থ্যবান হয়ে উঠবে। এর জন্য এই সময় তে গর্ভধারিনী মায়ের ৭০  থেকে ১০০ গ্রাম প্রয়োজন প্রোটিন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি খাবেন

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস প্রচুর পরিমানে পুষ্টি ও প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে‌। তাহলে আপনার বাচ্চা হয়ে উঠবে একদম সুস্থ সবল এবং প্রথম তিন মাস থেকে যখন একটি মা নিয়মিত আইরন, জিংক, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবে। 

তখন একটি গর্ভধারিনী মা থাকবেন সুস্থ ও বাচ্চাও থাকবেন সুস্থ। বাচ্চার দাঁত, হার, শরীরের গঠন সবকিছুই নির্ভর করবে একটি গর্ভধারিনী মায়ের খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্যের উপর। এর জন্য আমাদের যা যা খেতে হবে:

  • আয়রন জাতীয় খাবার: মুরগির মাংস, ছোলা, মুরগির ডিম, হাসের ডিম, কবুতরের ডিম, কলা, পালং শাক ইত্যাদি।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: আপেল, কমলালেবু, আঙ্গুর, লেবু, আমলকি, পেঁপে ইত্যাদি।
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: তিশি, তিল, ডিম, ডুমুর, শাক, টফু, কাঁটা সমৃদ্ধ মাছ, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, পনীর, দুধ, দই ইত্যাদি।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: খাবার সমৃদ্ধ সিদ্ধ ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মহিষের মাংস, ছাগলের মাংস, আরো অন্যান্য মাংস, ডাল সব ধরনের ডাল ইত্যাদি।
  • আর যুক্ত খাবার: ভাত, ছোলা, ওটস ,সবুজ মটর, ভুট্টা, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।

এই ধরনের খাবার প্রত্যেক দিন খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা ও বাচ্চার মা দুজনেই সুস্থ থাকবেন। এজন্য প্রথম তিন মাস খুবই প্রয়োজন এই সব প্রোটিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।

গর্ভাবস্থায় কোন কোন সবজি খেতে হবে

একজন গর্ভবতী মায়ের শাকসবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শাকসবজির মধ্যে রয়েছে অনেক ধরনের প্রোটিন, ভিটামিন এ এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আপনিও আপনার সন্তানের খুব উপকার হবে। ও আপনার সন্তান হয়ে উঠবে একজন সুস্বাস্থ্যবান সন্তান। কেননা এগুলো আপনার সন্তানের হাড়ের বৃদ্ধি করবে, আপনার সন্তানের হার শক্ত করে তুলবে। 

এতে করে আপনার সন্তান জন্মের পরে লম্বা হতে থাকবে। এবং দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখবে এগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি সুন্দর ও ভালো হয়ে উঠবে। এর জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রত্যেকদিন ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার ৭৭০ মাইক্রগ্রাম খাওয়া প্রয়োজন। এর জন্য আপনি খেতে পারেন গাজর, মিষ্টি আলু, সবুজ লতাপাতা যুক্ত শাকসবজি ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় কি কি  খাওয়া যাবে না

কিছু ভুল খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমাদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হবে। যাতে করে আমাদের গর্ভের বাচ্চা সুস্থ ও ঠিক থাকে কেননা ভুল কিছু খাওয়ার ফলের গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেরিয়ে যায়। 

এই ক্ষেত্রে আমাদের সেসব সকল খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে যেগুলো: আধা সিদ্ধ কোন খাবারে আমাদের খাওয়া চলবে না গর্ভাবস্থায়। কেননা গর্ভাবস্থায় যদি আমরা আধা সিদ্ধ খাবার খায় তাহলে আমাদের সন্তানের ওপরে সেটি প্রভাব পড়বে। এর জন্য আধা সিদ্ধ ডিম, আধা সিদ্ধ মাংস, এগুলো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। 

এই খাবার মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার থাকতে পারে যে কারণে প্রকৃতপক্ষে গর্ভস্থায় গর্ভপাত হবার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। এর জন্য আমাদের সব রকমের খাবার বা প্রোটিন সম্পূর্ণ খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করে খাইতে হবে। এই সময় যে কোন মতে আধা সিদ্ধ বা হাফ বয়েল ডিম অল্প পরিমাণে সেদ্ধ করা মাছ‌। অল্প পরিমানে সেদ্ধ করে রান্না মাংস একদমই খাওয়া চলবে না। 

এবং এর সাথে চা, কফি, আনারস কাঁচা, পেঁপে ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো না খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ও আপনার বাচ্চারে উপকার হবে। 

গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের খুবই প্রয়োজন হয় একটি মায়ের। কেননা প্রোটিন খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চার খুবই উপকার হয় তাই এর জন্য আমরা অনেক ধরনের মাছ খাই। কিন্তু সব ধরনের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের লাভ হয় না। আমরা যদি ভুল কোন মাছ গর্ভাবস্থায় খেয়ে ফেলি তাহলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য আমাদের হিসেব করে মাছ খেতে হবে। 

চিকিৎসকদের মতে এমন কোন মাছ খাওয়া যাবেনা যেটি তে সমুদ্রের অধিক মাত্রায় পারদ থাকে। এই মাছগুলো খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভ পাত হতে পারে। যেমন সার্ক, টুনা ইত্যাদি মাছে অনেক পরিমাণে পাধক থাকে। এর জন্য গর্ভবতী মহিলাদের এই মাছগুলো থেকে বিরত থাকাই ভালো‌। 

তবে আপনি যেগুলোতে অল্প পরিমাণে পারদ আছে এমন মাছ খাওয়া যেতে পারে। যেমন: চিংড়ি, শ্যামন, তেলাপিয়া, মাগুর, শিং ইত্যাদি এই সব ধরনের মাছ খেতে পারেন। এই মাছগুলোতে কম পরিমাণে পারদ থাকে।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়

মূলত একটি শিশুর বুদ্ধি বিকাশ তার মায়ের পেট থেকেই শুরু হয়। এর জন্য গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের উচিত যে তার বাচ্চার মস্তিষ্কের বৃদ্ধি করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা। এতে করে নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হবে বুদ্ধিময়। 

এর জন্যই একটি গর্ভবতী মায়ের তার বাচ্চার মস্তিষ্কের বুদ্ধি বৃদ্ধি করার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেমন: ডিম, মাছ, মেশানোর ডাল, পুদিনা পাতা, সবুজ শাক, কলা, শুকনো ফল, এগুলো খাওয়ার মাধমে একটি সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশ হয়।

গর্ভস্থায় এর জন্য কোন নারী গর্ভধারণ করলে তার উচিত আয়রন ও ফলিক এসিড আছে এমন খাবার খাওয়া।

গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়

একটি সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা কে না চায়। এর জন্য আমাদের মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। এবং খাবার খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার গায়ের রং সুন্দর করে তোলার জন্য খেতে হবে আমাদের যেমন: 

  • দুধ: গর্ভবতী মহিলার দুধ খাওয়া খুবই উপকারী। এবং এটি খাওয়ার মাধ্যমে তার বাচ্চার সুগঠন ও ফর্সা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ডিম: একটি সুন্দর ফুটফুটে যদি বাচ্চা পেতে চান তাহলে আপনার ডিম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়-তিন মাস গর্ভাবস্থার পরে ডিম খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা সুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কুসুম খাওয়া আবশ্যক এটিতে অনেক পুষ্টি রয়েছে।
  • জাফরান দুধ: আমরা অনেকেই মনে করি জাফরান দুধ খাওয়ার মাধ্যমে শিশুর গায়ের রং ফর্সা হয়। এর জন্যই জাফরান দুধ খাওয়া জরুরি এটি আমাদের ও শিশুদের ভালো রাখে‌।
  • চেরি ও বেরি জাতীয় ফল: অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের ত্বকের কোন ক্ষতি হয় না। এটি আমাদের ত্বকের ক্ষতি থেকে বাঁচায় এর জন্য গর্ব অবস্থায় এমন ধরনের ফল খেতে হবে। যেটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যাতে করে শিশুর ত্বক সুন্দর ও সুস্থ থাকে।
  • টমেটো: টমেটো খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের সূর্যের আলো থেকে যে ক্ষতি হয়। সে আলো থেকে ক্ষতি হওয়া থেকে টমেটো আমাদের প্রতিরোধ করে। এর জন্য টমেটো খাওয়ার মাধ্যমে ত্বকের ক্ষতি হওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে। এর জন্য গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্য গর্ভবতী মহিলার টমেটো খাওয়া উচিত।
  • কমলা: কমলার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি আর ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের সুস্থ ও ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে। এর জন্য কমলা খাওয়ার মাধ্যমে শিশুর ত্বক ফর্সা হতে পারে।
  • নারিকেল: নারিকেলের সাদা শাঁস খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক সুস্থ থাকবে ও সুন্দর হবে এবং শিশুদেরও। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে নারিকেল খাওয়া মোটেই ভালো নয়। এটি সমস্যা হতে পারে আপনার গর্ভাবস্থায় এর জন্য নারিকেল বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।

এগুলো খাওয়ার একটি ফুটফুটে বাচ্চা জন্ম দেওয়া সম্ভব বলে মানা যায়।

আমাদের পরামর্শ

একটি সুন্দর ফর্সা বাচ্চা হলেই শুধু খুশি হওয়া আমাদের জন্য প্রয়োজন নয়‌। আমাদের আশা করতে হবে যে বাচ্চাটি আপনি জন্ম দেবেন সেটি যেন মেধাবী সুস্থ সম্পন্ন একটি বাচ্চা হয়। কেননা সৌন্দর্য সবকিছুর মূল নয়, এর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের চাইতে হবে আমাদের বাচ্চা যেন সুস্থ ও সঠিক হয়ে জন্ম নেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url