সহবাসের নিয়ম নীতিপ্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি আমরা লিখেছি মূলত স্বপ্নদোষ কি এবং স্বপ্নদোষ
কেন ঘনঘন হয় এর থেকে মুক্তির উপায়। বিষয়কে কেন্দ্র করে। সঙ্গে থাকছে স্বপ্নদোষ
বন্ধ করার দশটি ইসলামিক উপায়। সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্যও, যা পড়লে আপনি পুরো
বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবেন, ইন শা আল্লাহ।
সূচিপত্র: স্বপ্নদোষ কি এবং স্বপ্নদোষ কেন ঘনঘন হয় এর থেকে মুক্তির
উপায়
স্বপ্নদোষ কি এবং স্বপ্নদোষ কেন ঘনঘন হয় এর থেকে মুক্তির উপায়
স্বপ্নদোষ মানে হচ্ছে যে ঘুমের মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে যাওয়াকেই স্বপ্নদোষ বলে।
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের প্রথমত ১৩ বছর থেকে শুরু করে ১৮-১৯ বছর বয়সী
ছেলেদের এই স্বপ্নদোষগুলো হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে ছেলেদের বয়সন্ধিকালটাও তখন
থেকে শুরু হয়।
ছেলেদের বয়সন্ধিকাল হওয়ার পরপরই এই স্বপ্নদোষ দেখা দিতে পারে। আমি একজন চিকিৎসক
হিসেবে আমি এই স্বপ্নদোষকে এটিকে দেহের একটি প্রাকৃতিক নিঃসরণ প্রক্রিয়া হিসেবে
দেখি। যখন দেখবেন যে একজন যুবক ছেলের শরীরে অতিরিক্ত বীর্য হয়।
তখন এই স্বপ্নদোষ হয়ে সে অতিরিক্ত বীর্য ঘুমের মাধ্যমে তার শরীর থেকে গোপনাঙ্গ
দিয়ে বেরিয়ে যায়।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়। যখন একজন পুরুষ যৌন
উত্তেজনার চিন্তায় বা স্বপ্নে নিমগ্ন হয়, তখন মস্তিষ্কে শুধু এগুলোই ঘুরতে থাকে
শরীরের মধ্যে একটি উত্তেজনা কাজ করে।
তখন মস্তিষ্কের এক ধরনের হরমোন সিগন্যালের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে
তোলে এবং ফলস্বরূপ ভাবে এই স্বপ্নদোষ ঘটে যায়। এই স্বপ্নদোষ হওয়ার কিছু নিয়ম
রয়েছে একজন যুবক ছেলেদের শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত বীর্য বেরিয়ে যায় তখন তাদের
শরীরে অনেক অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়।
তাই এই স্বপ্নদোষকে কখনো হালকা ভাবে নিয়ে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
কারণ যখন ঘন ঘন এই নিঃসরণের কারণে শরীরের জন্য কিছুটা হলেও দুর্বলতা সৃষ্টি করতে
পারে। আমি একজন বলতে পারি একজন যুবকের যখন এই স্বপ্নদোষ হয়।
তখন তার শরীরটি অনেক দুর্বল হয়ে যায় এবং সেই দিনটা তার অনেক খারাপ যায় তার
মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। সাধারণভাবে সে কোন কাজে মন বসাতে পারবে না মন মাইন্ড
ভালো থাকবে না। এই স্বপ্নদৃষ্টি সাধারণত অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও অশ্লীল চিন্তা
একাকীত্ব মানসিক চাপ।
এবং ইন্টারনেটের অতিরিক্ত আসক্তি তারপর অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে গিয়ে
অশ্লীল ভিডিও দেখা এগুলোর কারণে এই সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চিকিৎসা
কত ভাষায় আমরা জানি যে ঘুমের মাঝে র্যাপিড আই মুভমেন্ট ভেজে এই ধরনের যৌন
স্বপ্ন দেখা ও বীর্যপাত হওয়া।
একটি নিউরো সাইকোলজিক্যাল রেসপন্স। কিন্তু যদি বারবার হয় তাহলে তা মানসিক
স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। এই স্বপ্ন দেশ থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে
সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে মানসিক ও দৈহিক নিয়ন্ত্রণ। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে
রোগীকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
যেন তারা রাতে ঘুমানোর আগে অজু করে কোন উত্তেজক খাদ্য যেমন বেশি প্রোটিন বা
চর্বিযুক্ত খাবার না খায়।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়। এবং ঘুমানোর
আগে কোনো রকম অশ্লীল কন্টেন্ট দেখা বা পড়া থেকে বিরত থাকে।
নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত মানসিক প্রশান্তি দেয় যা ঘুমকে গভীর করে এবং অনর্থক
চিন্তা থেকে দূরে রাখে। এছাড়া হালকা ব্যায়াম সুষম খাদ্য পুষ্টিকর খাদ্য যেমন
কলা বাদাম ও দুধ শরীরের ভেতরের ভারসাম্য বজায় রাখে। মানসিক প্রশান্তির জন্য
মেডিটেশন বা ধ্যান চর্চা করা যেতে পারে।
তবে যদি এই সমস্যা নিয়মিত হতে থাকে এবং শরীরের ক্লান্তি দুর্বলতা মনোযোগের ঘাটতি
কিংবা হতাশা দেখা দেয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অপরিহার্য। আপনি যেকোনো
নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আপনার পার্সোনাল সমস্যা গুলোর কথা বলবেন।
এবং এগুলো বলতে কখনও লজ্জা বোধ মনে করবেন না। আমরা অনেক সময় হরমোন টেস্ট
সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং এবং লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন থেরাপি দিয়ে থাকি। এই
সমস্যাটি গোপনীয় ও ব্যক্তিগত হওয়ায় রোগীর সাহস ও সান্ত্বনা দিয়ে চিকিৎসা
গ্রহণের দিকে উৎসাহিত করা উচিত। সুতরাং যদি স্বপ্নদোষ ঘন ঘন হয় সেটাকে স্বাভাবিক
ভেবে কখনোই অবহেলা করবেন না।
একজন সচেতন পুরুষ হিসেবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে এ বিষয়গুলো
সম্পর্কে সচেতনতা খুবই জরুরী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা
গুলি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার দশটি ইসলামিক উপায় জেনে নিন
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি সবসময় মনে করি, একজন রোগীর চিকিৎসা শুধু শারীরিক নয়,
মানসিক ও আত্মিক দিক থেকেও হওয়া উচিত। তাই ইসলামিক পন্থা যে কতটা কার্যকর ও
গুরুত্বপূর্ণ, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
স্বপ্নদোষ বন্ধের ক্ষেত্রে ইসলামিক পথনির্দেশনা মানসিক প্রশান্তি, আত্মিক
পরিশুদ্ধি এবং আচরণগত পরিবর্তনের এক অনন্য সমন্বয়। আমি অনেক রোগীকেই দেখেছি যারা
আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি ইসলামিক জীবনব্যবস্থাকে অনুসরণ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে
রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
স্বপ্নদোষ একদিকে যেমন শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা আনে, তেমনি মনে এক ধরনের
অপরাধবোধ তৈরি করে। বিশেষ করে যারা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ঘটনাকে দেখেন,
তারা আরও বেশি মানসিক চাপে ভোগেন। এখানে ইসলাম আমাদের জন্য আশার আলো
দেখিয়েছে।
ঘুমানোর আগে ওজু করা, দোয়া পড়া, আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা, ডান কাত হয়ে ঘুমানো –
এগুলো হাদীস ভিত্তিক সুন্নত যা শুধু আত্মিক নয়, মানসিকভাবেও গভীর স্বস্তি এনে
দেয়। যখন একজন রোগী প্রতিদিন অশ্লীল কনটেন্ট দেখেন, অথবা অনিয়ন্ত্রিত চিন্তায়
ডুবে থাকেন।
তখন ব্রেইনের হরমোনাল রেসপন্স স্বাভাবিক থাকে না। এটি রাতের বেলায় স্বপ্নদোষের
অন্যতম কারণ। ইসলাম আমাদের এই সব চিন্তা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। তাই দিনে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ইসলামি বই পড়া, রোজা রাখা, এবং সময়মতো ঘুমের অভ্যাস।
এসব রোগীর দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করলে ফলাফল আশাতীত হয়। ইসলামে শুধু শারীরিক
পরিচ্ছন্নতা নয়, মানসিক পরিচ্ছন্নতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই রোগী যখন নিয়মিত
কুরআন তেলাওয়াত করেন, দোয়া করেন, এবং নিজেদের ভুলের জন্য ইস্তিগফার করেন – তখন
তাদের মন থেকে অপরাধবোধ কমে যায়।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়।
এই মানসিক মুক্তিই রোগীকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এই ইসলামিক
পন্থাগুলো শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, একধরনের থেরাপিও। এ কারণে আমি আমার রোগীদের
বলি, আপনারা চিকিৎসার পাশাপাশি এই উপায়গুলোও নিয়ম করে অনুসরণ করুন। কারণ, রোগ
সারানোর চাবিকাঠি কেবল ওষুধ নয়, বরং আত্মিক শান্তিও হতে পারে তার বড় উপাদান।
নিচে স্বপ্নদোষ বন্ধ করার দশটি ইসলামিক উপায় তুলে ধরা হলো:
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করা
- ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি ও ৩ কুল পড়া
- ডান কাত হয়ে ঘুমানো (হাদিস মোতাবেক)
- ইস্তিগফার ও দোয়া বেশি বেশি পড়া
- ঘুমানোর আগে ওজু করে নেওয়া
- রাতের খাবারে হালকা ও সহজপাচ্য খাদ্য খাওয়া
- বেশি সময় একা না থাকা
- অশ্লীল ছবি ও ভিডিও থেকে দূরে থাকা
- কুরআন তেলাওয়াত করা এবং রাতে দোয়া করে ঘুমানো
- নিয়মিত রোজা রাখা (বিশেষ করে নফল রোজা)
এইসব পদ্ধতিতে আপনি ইসলামিকভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং স্বপ্নদোষ
বন্ধ করার ইসলামিক উপায় গুলোর বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মিক শান্তিও লাভ
করবেন।
স্বপ্নদোষ হলে আমাদের শরীরে কি কি ক্ষতি হয়
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, স্বপ্নদোষ যদি মাঝেমধ্যে ঘটে, তবে
তা কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক নিঃসরণ প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন
এটি ঘন ঘন হতে থাকে, তখন এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে।
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আমি বহুবার এমন রোগী পেয়েছি যারা স্বপ্নদোষের কারণে
দীর্ঘমেয়াদী দুর্বলতা, মানসিক চাপ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগেছেন। প্রথমত,
ঘন ঘন স্বপ্নদোষ শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ বের করে দেয়।
যা দেহের পুষ্টি ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি এক সময় শারীরিক দুর্বলতা,
মাথাব্যথা, চোখের নিচে কালি পড়া, এবং অলসতা এনে দেয়। অনেক রোগীই জানান যে, ঘুম
থেকে জাগার পর তারা খুব ক্লান্ত অনুভব করেন। এটি আসলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং
শারীরিক শক্তির অপ্রত্যাশিত নিঃসরণের ফলাফল। দ্বিতীয়ত, স্বপ্নদোষ মানসিকভাবে
ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষ করে কিশোর এবং যুবকদের মধ্যে এটি অপরাধবোধ, আত্মগ্লানি এবং আত্মবিশ্বাসের
ঘাটতির সৃষ্টি করে। অনেকেই একে পাপ বা অনৈতিক কিছু মনে করে মানসিকভাবে চাপ অনুভব
করে থাকেন। এর ফলে হতাশা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং আত্মসম্মান বোধের হ্রাস ঘটে।
তৃতীয়ত, যারা ঘন ঘন স্বপ্নদোষে ভোগেন, তাদের মধ্যে যৌন দুর্বলতার লক্ষণ দেখা
যায়। এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সময়ের সাথে সাথে লিবিডো (যৌন ইচ্ছা) কমে যায়,
দ্রুত বীর্যপাত বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আবার অনেকে অতিরিক্ত কল্পনার জগতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে বাস্তব জীবনের
সম্পর্ক ও কর্মদক্ষতা প্রভাবিত হয়। স্বপ্নদোষের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো
একাকীত্ব এবং সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।
রোগীরা অনেক সময় কাউকে জানাতে পারেন না বা চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করেন।
এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে এবং রোগী দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার ভেতর বাস করে
যান।এই কারণে আমি সবসময় পরামর্শ দিই।
যদি এই সমস্যাটি ঘন ঘন ঘটে এবং শরীর ও মনের উপর স্পষ্ট প্রভাব ফেলে, তাহলে দেরি
না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির
উপায়। কারণ সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে, এই সমস্যাটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা
যায় এবং একজন ব্যক্তি তার স্বাভাবিক, সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী জীবনে ফিরে যেতে
পারেন
ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ কি
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বহুবার দেখেছি, কিশোর বা যুবক বয়সে অনেকেই স্বপ্নদোষ
নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিশেষত যখন তা ঘন ঘন হতে থাকে, তখন শারীরিক দুর্বলতার
পাশাপাশি মানসিক আতঙ্কও তৈরি হয়। কিন্তু আপনি যদি জানেন ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হওয়ার
কারণ কি?
তাহলে এই সমস্যাটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শরীরের ভেতরে যৌন হরমোনের
স্বাভাবিক নিঃসরণ এবং মানসিক উত্তেজনার কারণে বীর্যপাত একটি স্বাভাবিক বিষয়।
কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি অস্বাভাবিক মাত্রায় উত্তেজনার মুখোমুখি হন বিশেষ করে
অশ্লীল কনটেন্ট দেখা।
যৌন কল্পনায় অতিরিক্ত ডুবে থাকা, বা সারাদিন অলসতায় ডুবে থাকেন তখন মস্তিষ্ক
ঘুমের সময় স্বপ্নের মাধ্যমে এই অতিরিক্ত চাপ বের করে দেয়। ফলে ঘন ঘন স্বপ্নদোষ
হয়। আমার চেম্বারে আসা বহু কিশোর আমাকে বলেছেন, তারা দিনে প্রায়ই মোবাইল ফোনে
অশ্লীল ভিডিও দেখে ফেলেন।
বা ইচ্ছা না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কনটেন্টের মুখোমুখি হন।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ
থেকে মুক্তির উপায়। এই বিষয়গুলো মস্তিষ্কে একধরনের চিত্র ও উত্তেজনা তৈরি করে,
যা রাতে ঘুমের সময় অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত ঘটায়।
এছাড়া দিনের বেলায় কোনো কাজ না থাকলে, শরীর অলস হয়ে পড়ে এবং মানসিক উদ্দীপনা বাড়ে
এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। অনেক সময় অতিরিক্ত মসলা ও ভারী খাবার, বিশেষ করে
রাতে বেশি খাওয়া, শরীরের ভিতর উত্তাপ তৈরি করে।
এই দেহের অতিরিক্ত উত্তাপও স্বপ্নদোষের একটি ট্রিগার হতে পারে। তাছাড়া যারা রাতে
দেরিতে ঘুমান বা দুশ্চিন্তা, হতাশা বা মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন, তাদের মধ্যেও ঘন
ঘন স্বপ্নদোষের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো,
পবিত্রতার অভাব।
যদি কেউ রাতে অযু বা দোয়া ছাড়া ঘুমাতে যান, তাহলে শয়তান মনস্তত্ত্বের ওপর প্রভাব
বিস্তার করতে পারে। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে—যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন, অশ্লীলতা
থেকে দূরে থাকেন এবং রাতে পবিত্র অবস্থায় ঘুমান, তাদের মধ্যে স্বপ্নদোষের হার
অনেক কম।
অতএব, ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ হলো
- মানসিক উত্তেজনা ও কল্পনা
- অশ্লীলতা ও মোবাইল আসক্তি
- অলসতা ও কাজের অভাব
- রাতে ভারী খাবার খাওয়া
- দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ
- দেরি করে ঘুমানো ও অযু ছাড়া ঘুমানো
চিকিৎসক হিসেবে আমি বলব প্রতিটি রোগীর উচিত নিজ নিজ জীবনযাপনের ধরন পর্যবেক্ষণ
করা এবং এই কারণগুলো প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়া। ঘন ঘন স্বপ্নদোষ কোনো রোগ নয়, তবে
এটি শরীর ও মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই আগেভাগেই সতর্কতা ও পরামর্শ মেনে চললে এই সমস্যাকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা
যায়। এগুলি দূর করা গেলে স্বপ্নদোষ কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই আপনার যদি এই সমস্যাটি
নিয়মিত হয়, তাহলে এই কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।
স্বপ্নদোষ হলে কি গুনাহ হয়
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, স্বপ্নদোষ যদি মাঝেমধ্যে ঘটে, তবে
তা কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক নিঃসরণ প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন
এটি ঘন ঘন হতে থাকে, তখন এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে।
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আমি বহুবার এমন রোগী পেয়েছি যারা স্বপ্নদোষের কারণে
দীর্ঘমেয়াদী দুর্বলতা, মানসিক চাপ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগেছেন। প্রথমত,
ঘন ঘন স্বপ্নদোষ শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ বের করে দেয়।
যা দেহের পুষ্টি ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি এক সময় শারীরিক দুর্বলতা,
মাথাব্যথা, চোখের নিচে কালি পড়া, এবং অলসতা এনে দেয়। অনেক রোগীই জানান যে, ঘুম
থেকে জাগার পর তারা খুব ক্লান্ত অনুভব করেন। এটি আসলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং
শারীরিক শক্তির অপ্রত্যাশিত নিঃসরণের ফলাফল। দ্বিতীয়ত, স্বপ্নদোষ মানসিকভাবে
ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষ করে কিশোর এবং যুবকদের মধ্যে এটি অপরাধবোধ, আত্মগ্লানি এবং আত্মবিশ্বাসের
ঘাটতির সৃষ্টি করে। অনেকেই একে পাপ বা অনৈতিক কিছু মনে করে মানসিকভাবে চাপ অনুভব
করে থাকেন।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়।
এর ফলে হতাশা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং আত্মসম্মান বোধের হ্রাস ঘটে। তৃতীয়ত, যারা ঘন
ঘন স্বপ্নদোষে ভোগেন, তাদের মধ্যে যৌন দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যায়। এটা দীর্ঘদিন
চলতে থাকলে সময়ের সাথে সাথে লিবিডো (যৌন ইচ্ছা) কমে যায়, দ্রুত বীর্যপাত বা
ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আবার অনেকে অতিরিক্ত কল্পনার জগতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে বাস্তব জীবনের
সম্পর্ক ও কর্মদক্ষতা প্রভাবিত হয়। স্বপ্নদোষের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো
একাকীত্ব এবং সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।
রোগীরা অনেক সময় কাউকে জানাতে পারেন না বা চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করেন।
এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে এবং রোগী দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার ভেতর বাস করে
যান। এই কারণে আমি সবসময় পরামর্শ দিই।
যদি এই সমস্যাটি ঘন ঘন ঘটে এবং শরীর ও মনের উপর স্পষ্ট প্রভাব ফেলে, তাহলে দেরি
না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির
উপায়। কারণ সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে, এই সমস্যাটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা
যায় এবং একজন ব্যক্তি তার স্বাভাবিক, সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী জীবনে ফিরে যেতে
পারেন।
স্বপ্নদোষ না হলে কি হয়
অনেক সময় রোগীরা আমার কাছে এসে প্রশ্ন করেন, “ডাক্তার সাহেব, আমার কখনোই
স্বপ্নদোষ হয় না। এটা কি স্বাভাবিক? এই প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একেবারেই
স্বাভাবিক। কারণ, স্বপ্নদোষ যেমন অতিরিক্ত হওয়া দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, তেমনি
অনেকের মনে উদ্বেগ দেখা দেয় যখন এটি একদমই হয় না।
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বলব, স্বপ্নদোষ না হওয়া সবসময় কোনো সমস্যা নয়। এটি
নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক গঠন, হরমোনের মাত্রা, মানসিক অবস্থা এবং জীবনযাপনের
ধরনের উপর। কিছু মানুষের মধ্যে যৌন উত্তেজনার হরমোন (টেস্টোস্টেরন) কম থাকে বা
তারা খুব ব্যস্ত, ক্লান্ত।
এবং মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, যার ফলে তাদের মধ্যে এই ধরনের স্বপ্ন
খুব কম হয় বা একেবারেই হয় না। যদি একজন পুরুষ শারীরিকভাবে সুস্থ, যৌনাঙ্গের
কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক, এবং যৌন উত্তেজনার অনুভূতি আছে, তবে স্বপ্নদোষ না হওয়া
নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।
এটি একান্তই একটি ব্যতিক্রমধর্মী শারীরিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন, অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকেন এবং
মানসিকভাবে স্থির থাকেন, তাদের স্বপ্নদোষ খুবই কম হয় বা একেবারে হয় না – এবং
এটিই তাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক।
তবে কিছু ক্ষেত্রে, স্বপ্নদোষ না হওয়া একটি শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে,
যদি সেই ব্যক্তির যৌন ইচ্ছা একেবারে না থাকে, বা তিনি দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের
নিঃসরণ অনুভব না করেন। অনেক সময় এটি টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে হতে
পারে।
আবার যদি বীর্যগ্রন্থিতে কোনোরকম ব্লকেজ, সংক্রমণ, বা অজানা সমস্যার কারণে বীর্য
নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। সেক্ষেত্রে একজন
ইউরোলজিস্ট বা হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে
মুক্তির উপায়।
তবে আমি সবসময় বলি – শুধুমাত্র স্বপ্নদোষ না হওয়াটিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে,
নিজের শরীরের অন্যান্য লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। আপনি কি যৌন উদ্দীপনা অনুভব
করেন? সকালবেলা যৌনাঙ্গে স্বাভাবিক উত্তেজনা হয় কি? স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব করতে
পারেন কি?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে স্বপ্নদোষ না হওয়াকে অসুস্থতা হিসেবে
বিবেচনা করার কোনো কারণ নেই।“স্বপ্নদোষ না হলে কি হয়” – এই প্রশ্নের উত্তর হলো,
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো সমস্যা নয় এবং এমন বহু পুরুষ আছেন যাদের জীবনে এটি
কখনোই হয় না।
তবে যদি শারীরিক বা মানসিক অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে
পরামর্শ করাই শ্রেয়।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য যেগুলো খাবার খেতে হবে
সঠিক খাদ্যাভ্যাস স্বপ্নদোষ বন্ধ করতে অনেক সাহায্য করে। নিচে এমন কিছু খাবারের
তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো খেলে আপনি স্বপ্নদোষ কমাতে পারবেন:
- ঠান্ডা-প্রকৃতির খাবার যেমন দই, শসা
- বাদাম ও কিশমিশ (মানসিক শক্তি বাড়ায়)
- হালকা ও সহজপাচ্য রাতের খাবার
- মধু ও কালোজিরা (হাদিসে প্রশংসিত)
- দুধ – শরীরকে ঠান্ডা রাখে
- পুদিনা পাতার রস বা চা
- ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা)
- কাঁচা হলুদ গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খাওয়া
- ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার (মগ ডাল, কলা)
খাবারের মাধ্যমে আপনি যদি শরীরের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তবে
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার পন্থা আরও কার্যকর হবে।
স্বপ্নদোষ হলে শরীর দুর্বল হয় কেন
প্রত্যেকবার বীর্যপাতের ফলে শরীর কিছুটা শক্তি হারায় কারণ বীর্য তৈরি হয় রক্ত ও
পুষ্টির সমন্বয়ে। অতিরিক্ত বীর্যপাত মানে শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টি নিঃসরণ। এজন্যই
স্বপ্নদোষ হলে শরীর দুর্বল হয়।
এছাড়াও মনের মধ্যে অপরাধবোধ, মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি দুর্বলতার আরেকটি
কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শরীর দুর্বল না করতে চাইলে, স্বপ্নদোষের নিয়মিততা
নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।ঘন ঘন স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তির উপায়।
People Also Ask (FAQ)
প্রশ্ন:
মাসে
কতবার
স্বপ্নদোষ
হওয়া
স্বাভাবিক?
উত্তর: সাধারণত
মাসে
২-৩
বার
পর্যন্ত
স্বপ্নদোষ
হওয়া
স্বাভাবিক
ধরা
হয়।
বেশি
হলে
চিকিৎসকের
পরামর্শ
নেয়া
উচিত।
প্রশ্ন:
রাতে
স্বপ্নদোষ
হলে
কি
করব?
উত্তর: রাতে
স্বপ্নদোষ
হলে
ফরজ
গোসল
করতে
হবে
এবং
পরবর্তী
নামাজের
পূর্বে
পবিত্রতা
অর্জন
করতে
হবে।
প্রশ্ন:
স্বপ্নদোষ
কত
বছর
পর্যন্ত
হয়?
উত্তর: এটি
সাধারণত
কৈশোর
থেকে
শুরু
হয়ে
৩০-৪০
বছর
পর্যন্ত
হতে
পারে।
তবে
নিয়ন্ত্রণে
থাকলে
বয়স
বাড়ার
সঙ্গে
সঙ্গে
কমে
যায়।
স্বপ্নদোষ নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর
Q:
স্বপ্নদোষ
হলে
কি
রোজা
ভেঙে
যায়?
A: না, স্বপ্নদোষ
ঘুমের
মধ্যে
হলে
রোজা
ভাঙে
না
তবে
ফরজ
গোসল
করে
নিতে
হয়।
Q:
স্বপ্নদোষ
কি
বিয়ের
পর
বন্ধ
হয়ে
যায়?
A: সাধারণত
বিবাহিত
জীবনে
নিয়মিত
বৈধ
যৌন
সম্পর্ক
থাকলে
স্বপ্নদোষ
অনেকাংশে
কমে
যায়।
Q:
কি
করলে
স্বপ্নদোষ
বেশি
হয়
না?
A: রাতের
খাবার
হালকা
রাখা, নামাজ
পড়া, অশ্লীলতা
এড়ানো, নিয়মিত
ব্যায়াম
এসব
অভ্যাস
করলে
স্বপ্নদোষ
নিয়ন্ত্রণে
রাখা
যায়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি, আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনারা স্বপ্নদোষ কি এবং স্বপ্নদোষ কেন ঘনঘন
হয় এর থেকে মুক্তির উপায়। সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন। যদি এই বিষয়ে
আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে বা মূল্যবান মতামত জানাতে চান, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট
করে জানাবেন।
আর আর্টিকেলটি শেয়ার করে আপনার আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনদেরও স্বপ্নদোষ কি এবং
স্বপ্নদোষ কেন ঘনঘন হয় এর থেকে মুক্তির উপায়। জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url